আ'মরি মায়ের ভাষা! সুপ্রিয়া গঙ্গোপাধ্যায়
https://www.youtube.com/watch?v=Kuxll9iJL3s
অ
' কোন ভাষা মরমে পশি আকুল করি' তোলে প্রাণ ' চরণে 'ছন্দের জাদুকর ' নিঃসন্দেহে আমাদের মাতৃভাষার কথাই বলতে চেয়েছেন! নিজস্ব পরিচিতি,যোগাযোগ,সামাজিক ঐক্য,বিবিধ সরকারি নথিপত্র রক্ষা,শিক্ষা ও বিকাশের জন্য ভাষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।আন্দামানের সেন্টিনেলিস রা এখনও সাংকেতিক ভাষায় তাদের কথাবার্তা সারেন। মূক,বধির, অতিশিশু থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রী শয্যাশায়ী বৃদ্ধ, বৃদ্ধা অথবা আঘাতপ্রাপ্ত যে কোনও বয়সের ব্যক্তি হোক কিম্বা ধ্যান-মগ্ন সাধু __ প্রত্যেকেই তার মনের অনুভূতিকে ব্যক্ত ও বিনিময় করবার তাগিদে ভাষার আশ্রয় নেন।এমনকি নিদ্রামগ্ন ব্যক্তির স্বপ্নেও রয়েছে ভাষার আবেদন! যে কোনও অনুভূতিই হোক না কেন তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে একত্রিত করতে পারা চাই; আর সেটির অভ্যেস শুরু থেকেই হওয়া উচিত।পূর্ণাঙ্গতা প্রাপ্তির পর নতুন কিছু আরোপিত হলে, তা ততখানি হৃদয়গ্রাহ্য কিম্বা মস্তিষ্কে ধারণযোগ্য হয় না, মনস্তত্ত্ব বলে।
এতদসত্ত্বেও শাসকগোষ্ঠীর অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে তদানীন্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণের ভাষা বাংলা পেল না রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা,ইতিহাস বলে।
প্রতিবাদে মুখর হলেন বিক্ষুব্ধ জনগণ; এখানেই শেষ নয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ফাগুনের আটে আন্দোলনরত অসংখ্য তরুণ ছাত্রের উপর শুরু হল গুলিবর্ষণ।শহীদ হলেন আব্দুস সালাম, আবুল বরকত,রফিকুল আহমেদ,আব্দুল জব্বার ও সফিউর রহমান। আহত হলেন আরও শতাধিক যুবা।
সকলকে সঙ্গে নিয়েই স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিবিধ ভাষা ও বহুভাষিক সাহিত্যায়নকে আহ্বান জানিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭- ই নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ত্রিশতম অধিবেশনে UNESCO সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়,এই ২১ তারিখে আত্মাহুতি দেওয়া শহীদদের স্মরণ ও সম্মানার্থে দিনটিকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা উচিৎ।১৮৮ টি দেশের সমর্থন মিলল এই প্রস্তাবে। সমগ্র বিশ্বের ভাষা,সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও বহুভাষীকতাকে সমৃদ্ধ করতে এবং প্রতিটি মাতৃভাষাকে পৃথকভাবে সংরক্ষণ ও রক্ষা করতে জাতিসংঘের অনুমোদনক্রমে ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে প্রতি বছর মর্যাদা সহকারে উদযাপিত হয়ে চলেছে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
https://www.youtube.com/watch?v=BuxcGQuFT1o
আ
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন সহ প্রভাতফেরী, আলোচনা, প্রাদেশিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কার প্রদান ও নানাবিধ চিত্তাকর্ষক প্রাসঙ্গিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটি ভারত, কানাডা,রাশিয়া,ফিলিপাইন, চিলি, মিশর সহ সমগ্র বিশ্বের সকল দেশে পালিত হয়ে চলেছে।
UNESCO-র মতে শিক্ষা যেহেতু শেখবার ভিত্তি নির্মান করে,তাই শিশুর প্রাথমিক পরিচর্যার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত অতি প্রাথমিক স্তর থেকেই তার মধ্যে মাতৃভাষার মাধ্যমে শেখা ও জানার বীজটি বপন করা দরকার।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিয়মটি পুনরায় চালু হলেও কোভিডকালে বিদ্যালয়ের অবকাশে বিশ্বের বহু দেশেই পঠন পাঠন অব্যাহত রাখতে প্রযুক্তির সাহায্য অবলম্বিত হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইনে পাঠাভ্যাস চলাকালীন সুবিধার পাশাপাশি নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে শিক্ষাদাতা ও গ্রহীতা, উভয় তরফকেই।
সমগ্র বিশ্বে জ্ঞাত প্রায় ৬০০০ ভাষার মধ্যে কম - বেশি ৪৩ শতাংশই বিপন্ন।আদিবাসী তথা অন্যান্য নানান দেশজ ভাষাগুলি হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। মাত্র কয়েকশত ভাষাই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।তারও মধ্যে একশ - র বেশ কম-সংখ্যক ভাষাই ডিজিটাল বিশ্বে ব্যবহৃত!
https://www.youtube.com/watch?v=hPRGYxc_Ndw
ই
ভাষার প্রতিবন্ধকতাকে মেনে নিয়েও এই দূরবর্তী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগতভাবে ততটাও পটু নন শিক্ষকদেরই সিংহভাগ। তদুপরি রয়েছে উপযুক্ত শিক্ষণ সামগ্রী , উপকরণের অভাব ও আকর্ষণীয় কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা।আর শিক্ষার্থীদের তরফেও অভাব প্রয়োজনীয় যন্ত্রাণুষঙ্গের,মাধ্যমের ,উপযুক্ত পাঠ্য উপকরণ প্রাপ্তির,কিম্বা ডিজিটাল জ্ঞানে অভ্যস্ত সহযোগীর।এভাবেই বিপর্যস্ত আজকের বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থা।
প্রযুক্তির মধ্যে নিহিত শক্তি দ্বারা বহুভাষিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ,ও সকলের জন্য গুণগত শিক্ষা আর শিক্ষণ পদ্ধতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও নিশ্চিত করতে ২০২২ - এর মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি ছিল Using Technology for Multilingual Learning __Challenges & Opportunities, অর্থাৎ বহুভাষিক শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার __সাহসিকতা প্রদর্শন ও সুযোগ গ্রহণ।
বলাবাহুল্য হলেও বলি, আদিবাসী ও বিশ্বে উদ্ভূত নানান দেশজ জনগোষ্ঠীর ভাষাকে মর্যাদা জানিয়ে তাদের মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০২২-২০৩২ _ এই সময়কালটিকে অভিহিত করা হয়েছে International Decade of Indigenous Languages _বাংলা তর্জমায়, 'দেশজ উদ্ভূত ভাষাগুলির আন্তর্জাতিক দশক '।
২০২৩- এ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল 'শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল রূপান্তরণে একটি জরুরী বিষয় বহুভাষী শিক্ষা '।
২০২৪- এর প্রতিপাদ্য বিষয়_ " বহুভাষীক শিক্ষা ব্যবস্থা আন্তঃপ্রাজন্মিক শিক্ষণ প্রক্রিয়ার একটি স্তম্ভস্বরূপ " ।
এ বছর (২০২৫) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল উপজীব্য " আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন "। UNESCO ঘোষিত এই নির্দেশনায় স্থান পেয়েছে ভাষাগত বৈচিত্র্যের তাৎপর্য, বহুভাষায় শিক্ষা এবং প্রণোদিত ( নতুন ভাবে উদ্ভূত) ভাষাগুলির সংরক্ষণের কথা।
https://www.youtube.com/watch?v=XNU1eVxSpGE
ঈ
গবেষকদের বিশ্বাস,যে সমস্ত শিশু মাতৃভাষায় বলা কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুধাবন করতে পারে ও ঐ ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতেও পারে, তাদের বোধজনিত দক্ষতা খুব দ্রুত বিকশিত হয়।আর মাতৃভাষায় পঠনপাঠন করা শিশুরা পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও অন্য ভাষায় পঠনপাঠন করা শিশুদের তুলনায় অধিকতর সফল ও পারদর্শী হয়ে থাকে।
নিজস্ব সাংস্কৃতিক ভাষায় কথোপকথন প্রশংসনীয়।কারণ মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষ তার নিজস্ব সংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।যে সমস্ত শিশু মাতৃভাষায় বেশ সাবলীল, দক্ষ হয়ে ওঠে তাদের মধ্যে ভাষাসাহিত্য হৃদয়ঙ্গ মের ক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।সেক্ষেত্রে অন্য আরেকটি ভাষাকে রপ্ত করা তার পক্ষে সহজসাধ্য হয়ে ওঠে।
বাণিজ্যমুখী বিশ্বে প্রায়শঃই জীবিকার ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষায় দক্ষ স্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সুযোগ প্রশস্ত থাকে।সেক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট স্থানের ব্যক্তি অন্য ভাষায় পঠনপাঠনের দরুণ নিজস্ব মাতৃভাষায় কাজের সুযোগ প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত অথবা বাধাপ্রাপ্ত হন।
অভিবাসী শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম - বেশি মাতৃভাষা ভুলে যায়।অনেকক্ষেত্রে অভিভাবকরা সেটি অগ্রাহ্য করে চলেন। কিন্তু অভিভাবকদেরকে বুঝতে হবে যে মাতৃভাষায় কথা বলাটি একটি গর্বের উৎস।এটি শিশুকে তার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করায়। সর্বোপরি এটি আজীবন পুষ্ট করে চলে শিশুর আত্মবিশ্বাস।
বহু ইংরেজিসহ অন্যান্য শব্দকে আমরা বাংলার মধ্যে সংযুক্ত করে ফেলেছি ।তবে ইংরেজি সম্পূর্ণ বর্জন করলে বিশ্বায়নের দ্রুততায় পিছু হটেও যেতে পারি। ওটিকে বিদেশী ভাষা না ভেবে স্বচ্ছ দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠিত সংযোগরক্ষাকারী ভাষা হিসেবেই না হয় মানা গেল। ওটিকে পাশে রেখে আসুন না,প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ দ্বারা বিশ্বের প্রতিটি ভাষা এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও রক্ষা দ্বারা বিশ্বপরিবারের সকলকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বায়নের পথে এগিয়ে চলি।
🙏
✍️বন্ধুরা, মাতৃভাষাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলব,মায়ের মর্ম বুঝে তাঁর ঐশ্বর্য্য বর্দ্ধনের প্রয়াস চালিয়ে যাব; তাবলে অন্য মায়ের অন্তঃসার
উত্তরমুছুনবিফলে যেতে দিই কি ভাবে! আন্তঃ প্রাজন্মিক শিক্ষণ প্রক্রিয়ার স্তম্ভটি কে আজ আমরা সকলে চিনে ফেলেছি।তাই প্রবাহিত হোক বহু ভাষীক শিক্ষা ব্যবস্থার স্রোত।চলতি পথে প্রিয়ার অনুভূত দর্শনের সঙ্গে সহমত হলে জ্ঞাত করে ধন্য করবেন,please 🙏
✍️মাতৃভাষা দিবসের শুরুতে প্রণাম 🙏একুশে শহীদ ভাইদের প্রতি।নতুন করে নতুন ভাবে জেগে উঠুক আজকের উদযাপন।শুভেচ্ছা রইল বিশ্ববাসী মাতৃভাষা উদযাপনকারীদের জন্য।🪔💝🌹
উত্তরমুছুনধন্য মাতৃভাষা!
উত্তরমুছুনএ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল উপজীব্য "আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী বর্ষ উদযাপন "।