জনারণ্যে বাংলা গানের পাখি
" বাংলা আমার জীবনানন্দ ,বাংলা প্রাণের সুখ , আমি একবার দেখি,বারবার দেখি,দেখি বাংলার মুখ।" __ প্রতুল মুখোপাধ্যায়
বুনোহাঁস,পেঁচা,শালিক, চিল ও কাকের কথা বারম্বার লেখায় অভ্যস্ত জীবনানন্দ দাশের লেখনী মারফৎ বাংলার প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখিকে চেনা যায় আলাদা করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের দোয়েল,'পূরবী'-র বুলবুলি,শিশু কাব্যের পুরোনো বট কবিতার শালিক পাখি দুটি,খাপছাড়া-৮ -এর চন্দনা,বনফুল নাটকের পাপিয়া,শিশু ভোলানাথের দুয়োরানী কবিতার পেঁচা," প্রভাত-উৎসব " কবিতার পাখির কলরব কিম্বা " নিশীথে " গল্পের অতিপ্রাকৃত ( পাখি ) সত্তায় সাধারণের বোধগম্য ভাষায় ব্যক্ত করেছেন পাখির স্বভাবের নানান পরিচয়। উক্ত ইঙ্গিতের আলোকে মানবকুলে প্রাপ্ত পাখিটিকে চিহ্নিতকরণ অতীব সহজসাধ্য, জলবত-তরলং একটি বিষয়।কবিগুরু যদি বিহারীলাল চক্রবর্তীকে 'ভোরের পাখি' নামে আখ্যায়িত করতে পারেন, এমনকি অক্ষয়কুমার বড়ালকে ' বিহারীলালের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য ' রূপে চিহ্নিত করে থাকেন,তবে একই সাহিত্য-সংস্কৃতির জগৎসভায় যন্ত্রাণুষঙ্গহীন খালি গলায় সুরেলা গান গাওয়া শিল্পী শ্রদ্ধেয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে ' বাংলা গানের পাখি ' তকমা দ্বারা ভূষিত করলে অত্যুক্তি হতে যাবে কেন!এপার আর ওপার বাংলার সাঁকো, এই প্রতিভার গান কেবল দুপারের যন্ত্রণানুষঙ্গ নির্ভর,ঠিক যেন অবলা পাখির কণ্ঠ-নিঃসৃত বুলি, অন্য কিছু নয়!
১৯৯৪ সালে ' বাংলা গানের পাখি ' রচিত ,সুরারোপিত, সর্বাধিক বিক্রিত ' যেতে হবে ' অ্যালবামের ' আমি বাংলায় গান গাই ' শীর্ষক গানটির একটি বিশেষ লাইন " আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই ..." হয়ে উঠেছে গান গাইতে জানা ও না-জানা আপামর বাঙালির স্বকীয় অনুভূতি।গানের পাখি এখানে নিশিদিন খুঁজে পায় তার নিজের সত্ত্বাকে। গীতিকবির ন্যায় নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন খালি গলায় সুরে সুরে।
শ্রীজাত-র সঙ্গে সহমত হয়ে বলি," আজও আমাদের লেননের কথা বললে ' ইমাজিল ' মনে আসে, ডিলানের কথা বললে আগে মনে আসে ' হাউ মেনি রোডস্ ', জোন বায়েজের কথা বললে প্রথমেই মনে হয় ' ডায়মন্ডস্ অ্যান্ড রাস্ট ' বা কোহেনের কথা বললে ' সুজান ' অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রথমে মাথায় আসে, তেমনই প্রতুল মুখোপাধ্যায় নামটির সঙ্গে ' আমি বাংলায় গান গাই ' ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। সম্ভবতঃ এই গান আর প্রতুল মুখোপাধ্যায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে।"
বলাবাহুল্য হলেও বলি,বিবিসি বাংলার মানদণ্ডে সর্বকালের সেরা বাংলা গানের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানাধিকারী উক্ত গানটি ২০১৭- য় মুক্তিপ্রাপ্ত জিত অভিনীত ' ক্রান্তি ' চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত।
১৯৯৯ সালের কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গণে ' বাংলা গানের পাখিটির সঙ্গে মোলাকাতের প্রথম সুযোগ মেলে।মঞ্চে সেদিন ওনার সঙ্গে উপস্থিত অধুনা স্বর্গীয় পরিচালক শ্রদ্ধেয় ঋতুপর্ণ ঘোষ মহাশয়।মঞ্চে বক্তৃতা হয়ে চলেছে ,আর পাখিটি(প্রতুল বাবু ওরফে পানুদা) কথা সৃষ্টি করে অঙ্গ-বিভঙ্গীতে সুরারোপ দ্বারা বিনা বাদ্যযন্ত্রে গেয়ে চলেছেন একের পর এক গান,__ যেন পাখির কূজন!_ সকলই জনগণকে সচেতন করবার উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
আপন মনের খেয়ালে গানের বাণী সঙ্গে নিয়ে বৈঠকী আসর, মঞ্চ,এমন-কি গণ-আন্দোলনের পথের পথিকও হতে হয়েছে এই গানের পাখিকে।সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, শ্রমজীবী, নারী,তাই অগ্রাধিকার পেয়েছে তাঁর বাঁধা গানগুলিতে_ GAD (Gender And Development) দৃষ্টিভঙ্গীর আঙিনায়।জনারণ্যে বাংলার মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব স্তব্ধ করতে পারেনি তাঁর গতি।তাই অনায়াসে যোগদান করেছেন অন্য একটি দলে,__ শুধুমাত্র জনগণের কল্যাণ সাধনে ধন্য হতে! তাই রাজনৈতিক দল-বদলের প্রশ্নজনিত তীর্যক তীর তাঁকে অসম্মানিত করবার অভিসন্ধি সফল করতে অপারগ আজও।
নিজের লেখা গানগুলিতে ছাড়াও সুরসঞ্চার করেছেন খ্যাতনামা কবির কবিতায়ও।যে কবিতায় সুরারোপের রাস্তা খুঁজে পান না সাধারণ সুরকার,তাতে স্বচ্ছন্দ্য ' বাংলা গানের পাখি'টি ,_তাৎক্ষণিক, ঐকান্তিক প্রয়াসে সার্থক সে-সব কবিতা।পাখিটির মধ্যে প্রচ্ছন্ন ও কিঞ্চিৎ ভিন্ন আঙ্গিকে আবছা বিম্বিত সুর সম্রাট সলিল চৌধুরীর অতিক্ষুদ্র এক সংস্করণ,প্রতুল মুখোপাধ্যায় বিষয়ক সমালোচনায় প্রকাশ।
১৯৪২ সালের ২৫ শে জুন অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ তাঁর।পিতা প্রবোধচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জননী বাণীদেবী ঘরকন্যা কর্মে রতা।দেশবিভাগ কালে পিতার সঙ্গে ত্যাগ করেন বরিশাল।আর চলে আসেন ভারতবর্ষের পশ্চিম বঙ্গের হুগলীর চুঁচুড়ায়।চুঁচুড়ার বাড়িটি আজও পরিচিত 'লাল বাড়ি' নামে।
চতুর্থ শ্রেণী হতে লেখাপড়ার পাঠ শুরু তাঁর।বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতির যোগান ছিল না। মাঠে বসেই খোশ - মেজাজে অধ্যয়ন চলত তাঁর। চুঁচুড়ায় প্রসিদ্ধ পানুদা (গানের পাখি) র ছেলেবেলা থেকেই দিন কাটত কবিতা লিখে।মজার একটি কথা বিনিময় না করলেই নয়! আর সেটি হল বাড়ির মেঝেতে লিখে অঙ্ক কষবার কাহিনীটি আলোচ্য বাংলা গানের পাখির জীবনের স্মর্তব্য অভিনব বিষয়সমূহের একটি।
শৈশব হতেই সঙ্গীতযাত্রার শুভ সূচনা তাঁর।শিক্ষালয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মন্ত্রগানের নেতৃত্বে রাখা হত ছোট্ট প্রতুলকেই।কম বয়স থেকেই কবিতায় সুর দেওয়ার অভ্যেস তাঁর। বারো বছর বয়সে কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের 'আমি ধান কাটার গান গাই ' কবিতায় প্রথম সুরারোপ বাংলা গানের পাখি প্রতুলের।এই ঘটনাই তাঁর সঙ্গীত জীবনের হাতেখড়ি বলা যেতে পারে। প্রথাগত কোনও সঙ্গীত শিক্ষা ছিল না তাঁর।আপন হৃদয়-নিঃসৃত আবেগকে কথা ও সুরের জালে বেঁধে ফেলতে পারতেন তিনি।
প্রেসিডেন্সী কলেজে স্ট্যাটিসটিকাল বিভাগে উচ্চতর অধ্যয়নের পর ঐ বিষয়ে অধ্যাপনাও করেন তিনি।পরবর্তীতে বেছে নিলেন ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সুযোগ্য পদ।ব্যাংকে চাকরীর ফাঁকেই মধ্যজীবনে শিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ;__সে-ও সুমন নচিকেতা আর অঞ্জন দত্তদের রমরমার কালেই! বেশ কয়েকটি অ্যালবামও বেরোয় তাঁর।একদিকে মাও-সে-তুং- এর লং মার্চের মোহমুগ্ধতা __'কিসের ভয় সাহসী মন ', বা ' বেঁচো না বেঁচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি 'তে প্রকাশিত একটি যুগের রাজকীয় বাস্তবতা, অন্য দিকে শঙ্খ ঘোষের 'রাবণের প্রার্থণা 'র গান উপস্থাপনায় গানের পাখির সুরে আর অভিব্যক্তিতে বাঙ্ময় একটি যুগের হতাশা,পরাজয় আর অনিশ্চয়তা!
পারিবারিক পরিস্থিতিতে সঙ্গীত চর্চা বিষয়টি ছিল নেহাত বাতুলতা।নির্ভেজাল স্বীকারোক্তি সম্বলিত পাখির মুখের বুলি, ' আমি খুবই মনোযোগী শ্রোতা ছিলাম। সব রকমের গান শুনতাম।যেহেতু হারমোনিয়াম বাজাতাম না, তাই স্টেজের আর্টিস্ট হতাম না।আড্ডার আর্টিস্ট হতাম, বেশ খানিকটা হেঁটে কারো বাড়িতে গিয়ে অনুরোধের আসর শুনতাম।' শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রযুক্তি নির্ভর জলসার তুলনায় গানের মেঠো আসরই ছিল পাখিটির পছন্দের ক্ষেত্র।না চাইতেই ক্রমশঃ হয়ে উঠলেন সঙ্গীত শিল্পী_ বাংলা গানের পাখি!
অপেরার দল গড়ে গানওয়ালা চরিত্রে অভিনয় করতেন প্রতুল স্বয়ং।এভাবেই ক্রমশঃ স্টেজে গান গাইবার জড়তা কেটে যায় তাঁর।
বাংলাদেশে তিনি প্রথম গমন করেন ১৯৮২-এর ২৬শে মার্চ।এবিষয়ে প্রথম আলোর নিকট তার ব্যক্ত অনুভূতিটি এরূপ: " অ্যারোপ্লেন থেকে যখন বাংলাদেশে ভূমি প্রথম দেখতে পেলাম,মনে হল কি আর নতুন দেশে এলাম।এ যে আমার নিজের ঘরেই যাচ্ছি।একটি স্মরণীয় দিন ( স্বাধীনতা দিবস )- এ আসতে পেরে বেশি ভাল লাগছে।"
ঐ বছর ( ১৯৮২ ) ' সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা 'র প্রধান অতিথির পদ অলংকৃত করেন তিনি।উৎসবের আয়োজনে ছিল ' বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী '।ইতিপূর্বে আরও একবার বাংলাদেশের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করলেও নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের টানে এবার তাদের নিকট পৌঁছাবার উদ্দীপনা বহুগুণ বর্ধিত হয় গানের পাখির অন্তরে।
কলকাতা দূরদর্শনে পঙ্কজ সাহা মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে ৯১-৯৩ সালে মান্নাবাবু থেকে শুরু করে রবি ঘোষ পর্যন্ত অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বের সমাবেশে ১লা বৈশাখের সকালে অনুষ্ঠিত হত নাচ ,গানের নানান কলা-কৌশল।সেখানে তাঁর একবার গীত গান পরবর্তীতে প্রতি বছর একবার করে সম্প্রচারিত হত দূরদর্শনের পর্দায়।
বেহালায় একটি অনুষ্ঠানের কথা।আলো নেই।মুখের সম্মুখে ধরা হ্যাজাক।দু'টি মাইক হস্তে দু'লাইন গান গাইবার পর মাইক ছেড়ে খালি গলায় গান গাইতে শুরু করলেন বাংলা গানের পাখি।তাঁর গানের প্রক্রিয়ায় স্মরণে আসে রবীন্দ্র নাথের ভাষা, " পাখিটা যেন মনের কথা বুঝতে পারে ,তাই সে গান গায়।"
আশির দশকের মাঝামাঝি কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে মাসে একদিন বৈঠক বসত।সেখানেই versatile এই শিল্পীকে গান গাইবার অনুরোধ জানানো হলে কাঁচাপাকা চুলের বাংলা গানের পাখিটি উঠে দাঁড়ালেন সবশেষে।হস্ত - সঞ্চালন আর অঙ্গভঙ্গীসহ নৃত্য ও গীতের মেলবন্ধনে গেয়ে চললেন পরপর ৫-৬ টি গান _
* *পাথরে পাথরে নাচে আগুন,
** ( কেদার রাগে নিবদ্ধ )মরা গাছে দুলছে লাল,সাদা ফুল,... ইত্যাদি।
মন জয় করলেন উপস্থিত সকলের।
গীতিকার হিসেবে বাংলা গানের পাখি রচিত গান ১৯৭০-৮০ পর্যন্ত ১৫০+ টি,১৯৯০-২০০০ পর্যন্ত ২০০+ টি এবং ২০০১-২০২০ পর্যন্ত১০০+ টি।
এক-ঝলকে গানের পাখির অ্যালবামসমূহের তালিকা:
*******************************
** পাথরে পাথরে নাচে আগুন (১৯৮৮) অন্যান্য শিল্পীর সাথে,
** যেতে হবে (১৯৯৪),
** ওঠো হে (১৯৯৪),
** কুট্টুস কাট্টুস (১৯৯৭),
** স্বপ্নের ফেরিওয়ালা (২০০০) অন্যান্য শিল্পীর সাথে,
** তোমাকে দেখেছিলাম (২০০০),
** স্বপনপুরে (২০০২),
** অনেক নতুন বন্ধু হোক (২০০৪) অন্যান্য শিল্পীর সাথে,
** হ য ব র ল, সুকুমার রায়ের (২০০৪) আবৃত্তি ও পাঠ্য পাঠ, অন্যান্য শিল্পীর সাথে,
** দুই কানুর উপাখ্যান (২০০৫),
** আঁধার নামে (২০০৭) ,
** অসীমে উধাও হল(২০০৯) অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে,
** আমি বাংলায় গান গাই (২০১৭),
** আপন সুরে ভাষার গান (২০২০) অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে,
** ভোর - অপ্রকাশিত গান (২০২২).
তাঁর প্রথম অ্যালবাম ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত (পূর্বে উল্লিখিত ) ' পাথরে পাথরে নাচে আগুন '। এতে সমকালীন কবিদের কবিতায় সুরারোপ দ্বারা আলোড়ন তোলেন তিনি।এর সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলি হল __ ' চোখরা চাঁদ , যৌবন চাঁদ ',' লাল, কমলা,হলুদ, সবুজ ', ইত্যাদি।
নৌকা আর নদীর ব্যাপক ব্যবহারে মানবজীবনের সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলতে অনবদ্য 'কুট্টুস কাট্টুস' অ্যালবামের 'ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে ' গানটি।বাংলা সঙ্গীতপ্রেমীদের অর্ধাংশোধিকের কন্ঠে শূন্যলোক ভরপুর সে গানে__
' ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে, হাল ভাঙ্গা ডিঙ্গা
কেজানে কোথায় যাবে,ভেসে যাবে কিনা '।
শ্রমজীবী নিম্নবর্গের মানুষের সংগ্রামময় কন্ঠস্বর রণিত' স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ' অ্যালবামের ' আলু বেচো ...' (২০০১) গানের ছত্রে ছত্রে:
'আলু বেচো,পিঁয়াজ বেচো,জীবন বেচে যাও
ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলে পেটের আগুনে '...।
সমাজের কঠোর বাস্তবতা আর যুদ্ধবিরোধী বার্তার প্রকাশ তাঁর গানে।মুক্তিযুদ্ধ চেতনা আশ্রিত তাঁর গান ' লং মার্চ' (২০০১)।অন্যদিকে ' স্লোগান ' কবিতায় উচ্চারিত রাজনৈতিক অস্থিরতা বিষয়ক তীব্র বিদ্রূপবাণের অনুভূতি।
নারীর অধিকার নিয়ে চিন্তা ভাবনা প্রসূত ' তোমাকে দেখেছিলাম ' অ্যালবামের ' সেই মেয়েটি ' গানে নারীর আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি রেখেছেন সমাজের নিকট__
' সেই মেয়েটি নিজের মন জানে
কারো দানাপানি খায় না।'
' স্বপনপুরে '(২০০২) অ্যালবামে প্রাপ্ত,
' স্বপনপুরে কে যাবি রে,
স্বপনপুরে কে যাবি আয় ।
মানুষ সোহাগ ভরে
প্রকৃতির হাত ধরে
স্বপনপুরে ,
স্বপনপুরে যেতে অনেক বাঁধা।
টহল দিচ্ছে ভয় পথের ধারে'...
__ সমকালীন যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি ধরা আছে এতে।অ্যালবামটির বিশেষ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় গান দুটি i ) 'স্লোগান' ,এবং ii) 'তোমার কি কোনো তুলনা হয় '।
আরেকটি অ্যালবামের কথা বলি। ' আঁধার নামে '(২০০৭)__ সামাজিক বৈষম্য নিয়ে ধারালো সমালোচনা এখানে।অ্যালবামটিতে ' ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় ' বাঙ্ময় ও বেশ জনপ্রিয়।
পানুদা ( গানের পাখি ) কে উপলব্ধি করতে দেশপ্রেম আর প্রেম ও জীবন পর্যায়ের কয়েকটি গান অনবদ্য।
দেশপ্রেমমূলক গানের তালিকা:
** আমি বাংলায় গান গাই,
** ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে,
** ফেব্রুয়ারি একুশ তারিখ,
** লং মার্চ ও
** স্লোগান।
প্রেম ও জীবন পর্যায়ের গানের তালিকা:
** তোমাকে দেখেছিলাম,
** সেই মেয়েটি,
** চোখরা চাঁদ,
** স্বপনপুরে ও
** দুই কানুর উপাখ্যান।
বাংলা গানের পাখি,প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গানগুলির অন্যতম ' আমি বাংলায় গান গাই '।এই একটি গানের জন্য বাঙালির অন্তরের সিংহ ভাগ জায়গা তাঁর দখলে।বাংলা যে কোনও অনুষ্ঠানে গর্বভরে গাওয়া হয় এই গানটি।অস্বীকার করা যায় না ,' ডিঙ্গা ভাসাও ' গানটিও গেঁথে গিয়েছে বাঙালির হৃদয়তন্ত্রে।
না বললে নয়,বাংলা চলচ্চিত্র,' গোঁসাই বাগানের ভূত ' - এ প্লে-ব্যাক করেন এই বাংলা গানের পাখিই।
অনুপম রায়, ইমন চক্রবর্তী প্রমুখ শিল্পীর উপর অতি প্রভাব প্রতুলবাবুর সৃষ্টিকর্মের উত্তরাধিকার ঘোষণা করে।
শব্দ, ছন্দ ও সুরের যথাযথ ব্যবহারে ছোট আকারের কবিতাসমূহেও গানের সুরে সুরে প্রকাশিত কবির ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতিসমূহ।গীতিকবিতা সৃষ্টির দায়ে তাঁকে গীতিকবির সম্মান দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নিবন্ধকারের ন্যায় বহু পাঠক,লেখক বর্গ।
শ্রদ্ধেয় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় বলি,' তিনি নন আতস কাঁচের সঙ্গীতবেত্তা,চেনা-কিসিমের ক্রাউণ্ড-গুগল্সও তিনি নন।তিনি নন শ্রোতা কম অভিমানে মঞ্চ ছাড়ার মানুষও।তিনি অসাধারণভাবে সাধারণ।'
পুরস্কার আর সম্ভাবনায় ভরপুর প্রতুলবাবু ২০০১ সালে প্রাপ্ত হন ' বাংলা অ্যাকাডেমী 'পুরস্কার;২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার সেরা ২০ বাংলা গানের ( ষষ্ঠ স্থানাধিকারী: আমি বাংলায় গান গাই ) সম্মান আর ২০১৫- য় ' সঙ্গীত মহাসম্মান '।
ডিজিটাল যুগ ও জগতে নির্বাধ গ্রহণযোগ্যতা প্রশংসনীয়।২০২৫ সালে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইউ টিউবে ১০০+ মিলিয়ন ভিউ,Spotify তে মাসিক ৫০,০০০ শ্রোতা আর Gaana. com - এ টপ ৫০ বাঙালি শিল্পীর খেতাব প্রাপ্তি কোনও ছেলেখেলা নয়!
বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে একটি গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের মার্চে।অ্যালবামটির নাম ' আমি বাংলায় গান গাই '।তাঁকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র দুটি অন্বেষণ প্রযোজিত ও মানস ভৌমিক পরিচালিত 'প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান' এবং ' ডিঙ্গা ভাসাও ' (সমকালীন চলচ্চিত্র প্রযোজিত )।
কানাডার একটি প্রদেশে মাতৃভাষা ছিল ফরাসী।জোর - জবরদস্তি ইংরেজি চাপানোয় বিদ্রোহ হয়।বিরক্ত হন প্রতুল।দক্ষিণ ভারতেও এ ধরনের আন্দোলন ঘটে।পাকিস্তানে বাঙলা ভাষা নিয়ে সমস্যা হলে প্রতুল বলেন, ' ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় '।শুরু হল আইন অমান্য আন্দোলন।শহীদ মিনার যতবার তৈরি হয় ,ততবার ভেঙে দেওয়া হয়।রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে আসামের শিলচরে ব্যবস্থা হয় বাঙালি উচ্ছেদের।সেটি গণ-আন্দোলনের রূপ নেয়।বাঙালিকে বাঁচাবার জন্য পূর্ব-পাকিস্তান,শিলচর,এমন - কী পুরুলিয়া মানভূমেও চলে গণ-আন্দোলন।তাই গণ সঙ্গীতের একটুকু নয়,অনেকখানি দৃপ্তকণ্ঠের তপ্ত ছোঁয়া সিঞ্চিত তাঁর গানে গানে।
অন্নদাশঙ্করের ভাষায়, ' ধর্ম ইত্যাদির জন্য প্রাণ দিতে আমরা দেখেছি।তবে ভাষার জন্য আন্দোলন কখনও দেখিনি।'
প্রতুলবাবুর গানের কথায় ,সুরে সুরে চিত্রিত বাংলাভক্তির আন্দোলনে পুরুলিয়া , মানভূমের লোকেদের উপরে হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দনীয় প্রয়াসের ইতিহাসকথা।
' হাজার যুগের সূর্যতাপে জ্বলবে সেই লোহিতেই.../.../.../ চিনতে নাকি ক্ষুদিরামের.../.../ বাঙলা আমার বচন,আমি জন্মেছি এই বঙ্গে।'
শিলচরে মৃত শহীদদের মধ্যে ছিলেন নারী সদস্যা, শ্রীমতী কমলা ভট্টাচার্য্যও, তা প্রতুলের আলাপচারিতায় বন্দী।
ছাত্র সংগঠন গড়ার কালে বারম্বার গীত হয় পাখির_ ' মুক্ত হবে প্রিয় মাতৃভূমি ;/ সেদিন সুদূর নয় আর ... ... '।তাঁর ' জাগো সর্বহারা ...' আজও জাগিয়ে তোলে নিদ্রামগ্ন সর্বহারাদের।যখনই কোনো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, যোগায় আজও ' কিসের বাঁধা সাহসী মন...'।
গানের পাখির মুখ-নিঃসৃত গদ্য ভাষায়, "১৪০০ সালের ১লা বৈশাখে অনুষ্ঠান আছে।সেখানে পীযূষকান্তি সরকারও আসবেন।সেখানে আমিও গাইব। অফিসে বসে লিখছি।বিকেলে হাতে লেখা দেখে প্রথম শোনালাম।কেউ খুব বেশি প্রশংসা করলেন না।কেউ বলেন, নজরুল - নজরুল লাগছে না।' ডা: বারীণ রায় ( দাঁতের ডাক্তার ) গান শুনে বললেন, " আরেকবার গাও।' বাংলার মাটি , বাংলার জল '- এর পরে এরকম গান আর হয় নি।"
পাখির বুলি,' এখনকার গান যা শোনা যায় ,শুনি; তবে শুনব বলে শুনি না। কোনও গান বা কবিতা আমার মধ্যে ঢুকলো না মানে এমন তো নয়,যে সেগুলি ভাল নয়। অনুপমের কিছু কিছু গান ভাল লাগে।'
কবির সুমনের ভাষায়, " প্রতুল গায়ক ছিলেন না"। প্রতুল মুখোপাধ্যায় একটি phenomenon, একটি ঘটনা।তিনি নিজেই একটি আস্ত গান।গান দুনিয়ার নাগরিক হিসেবে গান গাইতেন তিনি।সুরেশ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় প্রতুল মুখোপাধ্যায় একটি গান রচনা করে দেন।মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত perform করত গানের সঙ্গে।তিনি একজন ভাল performer.
খালি গলায় গান গাইতে বাউলেরও প্রয়োজন একটি একতারার,অথচ বাংলার গানের পাখিটির সত্তর শতাংশ গানে যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যবহার নেই।কণ্ঠের modulation ও শারীরিক অভিব্যক্তি প্রকাশিত শিল্পীর সঙ্গীতে।একমাত্র সহযোগী যন্ত্র হাতের সঞ্চালনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন বেশ! মহাশ্বেতা দেবী স্বয়ং ভালোবাসতেন তাঁর গান।
বেঞ্জামিন মুলাসের কবিতা অনুবাদ করে সুর দিয়েছিলেন বাংলা গানের পাখি ,পানুদা। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের কবিতায় অনায়াসে সুরারোপ করেন এই কবি শিল্পী।চীনের মহানায়ক মাও-সে-তুং -এর কবিতাও বাংলা গানের রূপলাভ করেছে তাঁর কলম আর শৈল্পিক আবেগের জাদুতেই।
কবীর সুমন অপেক্ষা দ্রুত লিখে ফেলতেন গান।আর কথা বলতে বলতেই গান লেখা হয়ে যেত। কবীর সুমনের সঙ্গে গান লেখা,সুরারোপ ও গাইবার মাঝে সবচেয়ে বড় তফাত সুমনের হাতের গীটারটি।প্রতুল পাখি বলে তাঁর হাতে থাকত না কোনো বাদ্যযন্ত্র,না কোন যন্ত্রাণুষঙ্গ।
গানের পাখিটি শিল্পসৃষ্টির সাথে সাথে স্বয়ং হয়ে উঠেছেন বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতির দর্পণও।তাঁর সুর ও কথার বুনটে সৃষ্ট অনন্যধারার গান অনুপ্রাণিত করবে আগামী প্রজন্মকেও ।তাঁর খালি গলায় কথা ও সুর সম্বলিত গানগুলি গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন এযুগের শিল্পীরা।অগণিত শিল্পীর কণ্ঠে শোনা যায় ' আমি বাংলায় গান গাই '।এই গানটি যন্ত্রাণুষঙ্গ সহযোগে গেয়ে বাংলার মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন শ্রীমতি জয়তী চক্রবর্তী ও আরও অনেক শিল্পী।গানটির মাহাত্ম্য এমনই যে ইউটিউব মারফৎ গাওয়া সমস্ত শিল্পীর কন্ঠেই সমাদৃত এটি।লেখিকা স্বয়ং ছদ্মনামে গানটি গেয়ে বহুজনের ভালবাসা অর্জনে সমর্থা।
শতভাগ ভাল বা পূর্ণতা দিয়ে ঈশ্বর কোনও মানুষকেই প্রেরণ করেননি মর্ত্যে।তাই বলি, কন্ঠস্বর সুরেলা হলেও ভারী না হওয়ার কারণেই বাদ্যযন্ত্রহীন গানগুলি তাঁর জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের নিকট ততখানি আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি।তবে একথা ধ্রুব সত্য যে " আমি বাংলায় গান গাই " অন্য সমঝদার শিল্পীদের দ্বারা গীত হয়ে ছড়িয়ে পড়তেই তিনি আবিষ্কৃত হন জনারণ্যে জনসাধারণের বাংলায়।
জীবনানন্দের ন্যায় দুই বাংলার সেতু হয়ে উঠেছেন বাংলা গানের পাখি শ্রী প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
গানে গানে গণসঙ্গীতের ছায়াপ্রবাহযুক্ত আত্মশক্তির আকর প্রতুলবাবুর বৃহদন্ত্রে ক্যান্সারের কথা শুভানুধ্যায়ী দলের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে আগেভাগেই জ্ঞাত হয়েছিলেন লেখক - পাঠককুল।
১৯২৪- এর ১৫- ই জানুয়ারিও বাংলা গানের পাখি অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন এস এস কে এম হাসপাতালে। মুখ্য মন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময় তাঁর কন্ঠে শোনেন ' আমি বাংলায় গান গাই '...।
মা - ভাষার মাসে সর্বশেষ ডিঙ্গা ভাসাবার পূর্ববর্তী সমাচার এরূপ: পারিবারিকসূত্রে জানা যায় , এ বছর (১৪৩১) পয়লা বৈশাখে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।শেষবার অসুস্থ হওয়ার দু'দিন পূর্বেও একটি সাহিত্য পত্রিকার অনুষ্ঠানে যান।সেখানে গানও গান।যেদিন বেশি অসুস্থ হয়েছেন, সেদিনও দুটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।
ইংরেজি,২০২৫- এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গানের পাখিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেসময়ে তাঁর নাসিকা হতে সহসা রক্তক্ষরণ হয়।অতিরিক্ত সংক্রমণের প্রভাব পরে কিডনী আর ফুসফুসে।
তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ' .... মাঝরাতে ওনার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়...' অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাকে। সকাল দশটা নাগাদ নিঃশ্বাস চিরতরে স্তব্ধ হয় তাঁর।তুরির ছন্দে গান গাইতে গাইতে তাঁর আর হাঁটা হবে না বাংলার পথে পথে। মিহি কন্ঠে আর উঠবে না দৃপ্ত স্লোগান। তৃপ্ত শেষ চুমুকে অবশ্যই আত্মগত করেছেন বাংলার যথাসাধ্য নির্যাস! জীবদ্দশায় এসএস কে এম হাসপাতালে দেহ উৎসর্গ করবার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন শিল্পী।মৃত্যুকালে স্পর্শ করলেন ৮৩ বর্ষকে।
গানের বাণীর ফাঁকে ফাঁকে সুর ধরে কন্ঠে আবহের ফাঁক টুকুও ভরাট করে তুলতেন আপন মহিমায়।সেসব গানে ঠাঁই পায়,মূর্ত হয় মাঠে-ময়দানে লড়াইয়ের শরিক রাজনৈতিক কর্মী,ফুটপাথের উলঙ্গ শিশুরা,অনাদরে বেমানান শিশু শ্রমিকেরা,কিম্বা ঘাম ঝরিয়ে গ্রাসাচ্ছাদনের মঞ্চে সামিল দিনমজুরের দল।
' ছোকরা চাঁদ, জোয়ান চাঁদ ' গানে শ্রমিকদের হাতুড়ি মারার ছন্দ শুনে কবীর সুমন বলেন, ' এ সুর তো জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।' আপন মনে নিজের আনন্দে গান গেয়ে গেলেও পাখিটি কখনও এ দেশ বা রাজ্যের গান-তন্ত্র, বিনোদন-তন্ত্রের শরিক হননি, তা পূর্বেই উল্লিখিত।
১৯৭০ সালে ' নীললোহিত '-এর কবিতা 'লোরকা' অবলম্বনে রচিত ' কবির মৃত্যু ' তে মৃত্যু-পরবর্তী ভাবনা, কবির ভাষায়, " আমি বলেছিলাম কি না আমার হাত শিকলে বাঁধা থাকবে না।"
সত্যি সত্যিই পাখিটিকে শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা গেল না! মা - ভাষা (একুশে ফেব্রুয়ারি)-র মাসের ১৫ তারিখে খাঁচায় না থাকা খোলা আকাশে ওড়া বাংলা গানের পাখিটির চির বিদায় ঘোষিত হল এস এস কে এম -এর চিকিৎসা বিভাগ হতে।
ক্ষণিকের স্তব্ধতা গ্রাস করল কলকাতাবাসীসহ দু'বাংলার সাধারণ মানুষ ও বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাসকারী বাঙ্গালীর হৃদয়-সাম্রাজ্য।
২০২৫- এর শুরু থেকেই দীর্ঘ রোগভোগের অসুস্থতায় কাবু শিল্পী ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।১৫- ই ফেব্রুয়ারি সকাল দশটা নাগাদ প্রয়াণের পরবর্তীতে দুপুর দুটো থেকে বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনার্থে শিল্পীর নিষ্প্রাণ দেহ রাখা হয় রবীন্দ্রসদনে।সেখানে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গান-স্যালুটে ' বাংলা গানের পাখি ' ওরফে ' পানুদা ' ওরফে গীতিকবি-শিল্পী শ্রদ্ধেয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের চিরবিদায়ের সাক্ষী হয়ে রইলেন তাঁর কয়েক দশকের হার্দিক শ্রোতারা।আর শিল্পী তাঁর ডিঙ্গা ভাসালেন তাঁর বাংলা ভক্তকুলের অশ্রু সাগর পথে , লক্ষ্য অজানা কোনও সুরলোকের মুলুক, হয়তো!জল, স্থল , অন্তরীক্ষ মুখর হল বাংলা গানের পাখির আবেগপূর্ণ অরূপ প্রতুল কথায়,ছন্দে,বাণীতে, সুরে সুরে,__
" আমি বাংলায় গান গাই , আমি বাংলার গান গাই , আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই।
আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন , আমি বাংলায় বাঁধি সুর, আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতটা দূর ।।
বাংলা আমার জীবনানন্দ, বাংলা প্রাণের সুখ , আমি একবার দেখি, বারবার দেখি দেখি বাংলার মুখ ।।
আমি বাংলায় কথা কই, আমি বাংলার কথা কই, আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি, বাংলায় জেগে রই।।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার! আমি সব দেখেশুনে ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার! বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান, ক্ষিপ্ত তীরধনুক, আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ।।
আ _ আ হা আ _ _ আ _ হা _ হা _ আ _ হা _
আমি বাংলায় ভালবাসি, আমি বাংলাকে ভালবাসি, আমি তারি হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি।।
আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি বিনম্র শ্রদ্ধায়, মেশে তেরো নদী সাত সাগরের জল গঙ্গায় পদ্মায় ।।
বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক , আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ।।
আ _ _ আ হা _ _আ _ হা _ হা_ _ _ আ হা _ _ _ _ _ আ _ হা_ আ হা _ _.
*********************🙏 *******************
*******************************************
_
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন