জাগো সবলা !
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পারিবারিক চালিকা শক্তি বিশেষতঃ মেয়েরাই।তবু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহুরে আদব কায়দায় বেড়ে ওঠা অথবা আদিবাসী রমণীর ধমনী পর্যন্ত সমাজের যাবতীয় কলঙ্কিত বিষাক্ত মিথ্যে রসপ্রবাহের অসার প্রয়াস সমাজকে নিম্নাভিমুখী করেছে বারেবার।কিন্তু, কেন এই দ্বিচারিতা! সমাজের উন্নয়ন কামনা করি আমরা।অথচ, ছলে বলে কৌশলে নারীর পরিশ্রমের ছদ্মমূল্যকে গোপনে ঢেকে এগিয়ে চলবার উদ্যোগ চলেছে দিকে দিকে।উপরে উঠে নানান অভিমুখে গতিশীল হতে চায় সমাজ।আর তার সদস্যরা ভুলে বসে থাকেন_ এই সমাজ আসলে একটি পক্ষীর রূপক বৈ নয়। তার একটি ডানা পুরুষ আর অন্যটি নারী! শুধু পুরুষের উন্নয়ন ঘটলে আর নারীকে বেধে রেখে দিলে সমাজ নামের পাখিটি তার স্বভাবজাত উড্ডয়নে সক্ষম তো হয় না; উপরন্তু পুরুষ নামক ডানাটিকে নিয়ে উড়তে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়,পাখিটির ওই ডানাটি সমাজ পক্ষীর দেহ হতে ছিন্ন হয়ে পাখিটি ( সমাজ ) খোঁড়া হয়ে পড়ে।এই পঙ্গু সমাজের ধ্বংস অনিবার্য!নারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করবার এই ঔদ্ধত্য শুধু আজ নয়, যুগে যুগে সম্পাদিত ন্যক্কারজনক আচরণ।
আজ হয়তো বিশ্বজুড়ে রমরমিয়ে উদযাপিত 113 তম আন্তর্জাতিক নারীদিবস।অথচ বহুলাংশে আড়ালিত নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামময় ইতিহাসের কথা।
কোনও দীর্ঘলালিত সাফল্যের পথই একদিনে হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া যায় না।শতাধিক বছর পূর্বের ঘটনা_ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রাস্তায় নেমেছিলেন সুতো কারখানার নারী শ্রমিকেরা।প্রায় 15,000 শ্রমিকের এই আন্দোলন ছিল তাদের কাজের ' সময় ' 12 ঘণ্টা থেকে 8 ঘণ্টাতে কমিয়ে আনা, বৈষম্যহীন ন্যায্য মজুরী আর কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতকরণের দাবিতে।তাদের এই মিছিলের উপরে চলে লেঠেল বাহিনীর দমন - পীড়ন।আটক হন বহু নারী শ্রমিক।
সে বৈষম্য আজও বর্তমান। বস্তুতঃ আজ নারী যতই অগ্রগামী হন না কেন মূলতঃ তারা যে তিমিরে সেই তিমিরেই! সমীক্ষায় প্রাপ্ত,এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের মহিলা দ্বারা অর্জিত পারিশ্রমিক সমকাজে নিযুক্ত পুরুষদের তুলনায় শতকরা প্রায় 23 ভাগ কম।
1908 সালের 28 শে ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে Social Democrat নারী সংগঠনের উদ্যোগে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেড্ কিনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আন্তর্জাতিক নারী-সম্মেলন।জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন এই ক্লারা।
1910 সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী- সম্মেলন।17টি দেশ থেকে সম্মেলনে যোগ দিলেন 100 নারী প্রতিনিধি।ওইদিন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে 1911 খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হবে দিনটি।
দিবসটি পালনে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে নারী অধিকার সম্পর্কিত সচেতনতা।প্রথম নারীদিবস পালিত হল 1911-এর 19 শে মার্চ অস্ট্রিয়া,ডেনমার্ক,জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে।
1913 সালে রাশিয়াতে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালন করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রবিবার _ 23শে ফেব্রুয়ারিতে, সে - সময়ে রাশিয়াতে চালু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী।আধুনিক ক্যালেন্ডার অনুসারে ওই তারিখখানি দাড়ায় ' 8 ই মার্চ '- এ। এরপর থেকে বেশ কয়েকটি দেশে 8 - ই মার্চ পালিত হতে থাকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
রাষ্ট্রসংঘ 1975 খ্রিস্টাব্দটিকে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেন।সেই থেকে নারীর সম অধিকার স্থাপনের অঙ্গীকারে বিশ্ব জুড়ে উদ্ যাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
কোভিডকালে 2021সালে রাষ্ট্রসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় তৎ - নির্দেশিত মাতৃশক্তিকে জাগ্রত করে কোভিড-19কে সর্বতোভাবে পরাস্ত করে লিঙ্গ - নিরপেক্ষ, ভবিষ্যত শিশুর বাসযোগ্য উপযুক্ত দূষণমুক্ত, নির্মল ও সার্থক বিশ্ব গড়ার ডাকে সাধ্যমত সাড়া দিয়েছিলেন মনুষ্য বন্ধুগণ।
2022- এর প্রতিপাদ্য ছিল ' টেকসই আগামীর জন্য আজকের লিঙ্গসাম্য '। 2023- এর প্রতিপাদ্যটি ' ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন '। 2024- এর প্রতিপাদ্য,"নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ"।
রাষ্ট্রসংঘের ছত্রছায়ায় সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রয়াস চলেছে সমাজ পক্ষীর পুরুষ ও নারী পাখনার দুর্বলতরটির সুস্থতা সম্পাদন দ্বারা উড্ডীয়মান সমাজকে গতিশীল অথচ সাম্যাবস্থানে আনয়নের।একাজে অগ্রণী হবার কালে শুধু মাত্র পুরুষ নয়,নারীশক্তির ভূমিকা সমধিক,তা বলা বাহুল্য নয়।আর সে কথা আমরা জেনে আসছি পুরাণ আর অজানা শক্তির নানান কাহিনী মারফত যুগান্তর কালব্যাপী।আর, নারীশক্তির পূজা তো নর - নারী নির্বিশেষে সকলেই শিরোধার্য করেছিলেন সেই কোন যুগে!
https://youtu.be/nc8tn6BtHts?si=0S1EUVRK496oEDyA
রাষ্ট্রসংঘ ও প্রতিটি দেশ ও রাজ্যের শাসনতন্ত্র অবশ্যই ঝাঁপিয়ে পড়বেন মনুষ্যজাতির সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে।সেই সঙ্গে খোলা চোখে দেখা লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার পাহাড় ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হন পাঠক বন্ধুরাও!
https://youtu.be/UnVKk5_LCLA?si=e8HLrIedQGUiy0Oc
অর্থ অনর্থের মূল হলেও তার সুচারু প্রয়োগ ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা নারী ও তার যত্নলালিত পরিবার তথা সমগ্র বিশ্বের সুস্থতা বিধান করলে ধন্য আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উদযাপন, ধন্য আমার কলমাঞ্জলী।
পুরুষের চোখে এক ফোঁটা জল দেখতে সকলে নারি;
কারণ সেরা সে বিপরীত হতে,আর নহে সে যে নারী!!
শক্তিশালীর তকমা সমাজে পুরুষের দিকে হেলে;
শক্তিপূজায় ধর্মেতে নারী; সমাজে না, অবহেলে!
বিদ্যা,বুদ্ধি,সুযোগ সুবিধা পাবে তারা যারা নর;
ধর্মতঃ যিনি আশীষ দানেন সরস্বতী,দেন বর _
তিনি যে স্বয়ং নারী একজন! সকলে স্বীকার করে।
জ্ঞানে,বুদ্ধিতে নারী উচুঁ হলে নর গলা টিপে কেন ধরে!
অর্থসম্পদ _যত সব ভোগ পুরুষের দখলেই।
তবুও লক্ষ্মী নারী, তা জেনেও পূজা করে সকলেই!
গার্গী,লোপার তৈরী মন্ত্রে পুজে নর পুজারী _
নারীর ঋণকে ধামাচাপা দিতে কূটনীতি উজারী!
ধিক তবে সেই মেকি সমাজের নারীর মান যে মানে না।
সমাজ পাখির দুই ডানা নর আর নারী_ সবে জানে না!
একটিকে যদি বেঁধে টেনে নিয়ে আটকে রাখি গো শিকলে,
পঙ্গু সমাজ উড়তে পারে না; সভ্যতা যায় বিফলে।
সমাজের যত উচুঁ, নীচু আর ভাল - মন্দের ভেলা
সামলাতে হবে, সাম্যে আনতে সাঙ্গ হল যে বেলা!!
( স্বরচিত )
https://photos.google.com/photo/AF1QipO2yq7Rhsb5WU-VmJdPiImTFQaSNVRpeUml0Lzv
আজ থেকে 96 বছর পূর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'মহুয়া' কাব্যগ্রন্থের 'সবলা ' কবিতায় নারীকে তার আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকারের কথা বলে গিয়েছিলেন।সেই বাণীর যথার্থ রূপায়ণের অনেকটাই কেমন অধরা রয়ে গিয়েছে।আজ সকলের ঐক্যতান হোক ' জাগো সবলা '!!
🙏
✍️প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনে আপনাদের মূল্যবান সংযোজনা ' চলতি পথে প্রিয়া '- র আপাত অবলা সবলার জেগে উঠবার অবলম্বন হয়ে থাকুক।🙏
উত্তরমুছুন✍️Happy International Women's day 🙏
উত্তরমুছুন✍️Happy International Women's day to everyone.🙏
উত্তরমুছুন