https://photos.google.com/photo/AF1QipM9OPckv40Qti24v0qeW2o4dsJ9_ax5llo8Gv3O
"গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে/ বিশ্বহৃদয় পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে __ / তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।"
__ বিশ্বকবির ভাষায় বন্দনা করি এশিয়া মহাদেশের বিশ্ববরেণ্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত সাধকের।জীবনের অতি সাধারণ সুর ও কথাকে যিনি অবলীলাক্রমে গানের ভেলায় ভাসিয়েছেন ষাট বছরের অধিক কাল যাবৎ __ বাংলা তথা ভারত,এমন-কি বহির্দেশীয় গ্রাম ও নগরে হৃদয় সাম্রাজ্য বিস্তারকারী এই প্রতিভা__ তিনি আর কেউ নন, কলকাতার প্রবোধ চন্দ্র দে,ডাক নাম ' মান্না ', এই মুহূর্তে তালতলা দর্পণের মূর্তিমান গীত - বিম্ব।https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
' হৃদয়ের গান শিখে তো গায় গো সবাই,/ ক'জনা হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে ' _ তাঁর কণ্ঠেরই প্রতিধ্বনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যদি ক্রিকেটের মহারাজ হন তবে মান্না দে সঙ্গীতের অন্যতম অধীশ্বর নন কেন! হিন্দী এবং বাংলা ছাড়াও ভোজপুরী, মাগধী, মৈথিলী, পঞ্জাবী, অসমীয়া, উড়িয়া, কোঙ্কনি, সিন্ধি, গুজরাটি, মারাঠা, কানাড়া,মালয়ালম এবং নেপালী ভাষায় ভর করে বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীতের পসরাসহ তিনি পৌঁছে যান জনমনের দুয়ারে। বিভিন্ন ঘরানায় সাবলীল মান্না দে হিন্দী ও বাংলা সহ অন্যান্য ভাষায় আধুনিক, ছায়াগীত, কাওয়ালী, ভজন, গজল, রবীন্দ্রসংগীত, পল্লীগীতি থেকে শুরু করে রক্ ও পপ অতিক্রম করে শ্যামা সঙ্গীতের বিশেষ মোড়কেও আপনাকে বিলিয়ে দিয়েছেন জনপ্রবাহে।কণ্ঠস্বরে ছিল উচ্চাঙ্গের বুনিয়াদ।
আন্তর্জাতিক স্তরে এই ভারতীয় সাধক একাধারে নেপথ্য শিল্পী,সঙ্গীত-নির্দেশক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী রূপে হিন্দী সফল বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রকে আপনার নিকট চিরঋণী করে রেখেছেন।
' তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর / তুমি তাই এসেছ নীচে/ আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হ'ত যে মিছে।' গানের ' গ ' না জানা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করবার জন্য যে গায়কী ও দরদ আবশ্যক, তা-ই সঙ্গীতের এই অধীশ্বরকে এনে দিয়েছে তাঁদের চেতনার কাছাকাছি, বলা বাহুল্য।তাঁর অবদানে ভরপুর কয়েকটি ছায়াছবির নাম না করলেই নয়__সেগুলি হ'ল বাংলায় অ্যান্টনী-ফিরিঙ্গী, চৌরঙ্গী,দুই-পুরুষ,তথাগত,মৌচাক,স্ত্রী,নিশিপদ্ম ইত্যাদি,আর হিন্দীতে আনন্দ,শ্রী -৪২০, শোলে, ওয়াক্ত,জঞ্জীর,পড়োশান,চোরিচোরি,আওয়ারা, সত্যম শিবম সুন্দরম প্রভৃতি।
জননী মহামায়াদেবীর কোল আলো করে পূর্ণচন্দ্র দে-র পিতৃত্বে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে তারিখে উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে ৯ নং মদন ঘোষ লেনে এক যৌথ পরিবারে ভূমিষ্ঠ হলেন প্রবোধচন্দ্র, ভবিষ্যতের মান্না।শৈশবে দুরন্তপনায় ছাপিয়ে যেতেন সমবয়সী গেছো সঙ্গী - সাথীদের।বাগানের গাছে চড়ে বেড়ানো ছাড়াও বল ছোঁড়াছুঁড়ি খেলা ও ঘুড়ি ওড়ানো
https://photos.google.com/photo/AF1QipO7iLCkiP-mxtWHbsq6V0myudKGrfuA4wpt3-K4
তে পারদর্শী বালকটি কাকার নির্দেশনায় তুবড়ি বানাত অপূর্ব।তাঁর দৌরাত্ম্যের নমুনা : বাড়ির ছাঁদে একটি ফাঁকা ট্যাংক ছিল।পিতার আড়ালে সেই ট্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করে ঘুড়ি ওড়া চ্ছিলেন ছোট্ট প্রবোধচন্দ্র।পিতা তো সুতোর নিশানা বরাবর সন্ধান করে পৌঁছে গেলেন মূলসূত্রে।আর বেধড়ক মার!
ইতিমধ্যে স্থানীয় ইন্দুবাবুর পাঠশালায় শুরু হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক পাঠেরপর্ব।অন্ধ কাকা সঙ্গীতাচার্য্য কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সঙ্গীতের স্বরলিপি লিখে দেবার কাজটি করতেকরতে সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহ দানা বেঁধে ওঠে বালকের মনে।১৯২৯ থেকে শুরু হল সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান। স্কটিশচার্চ কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজে পড়াকালীন কুস্তি ও বক্সিং প্রতিযোগিতায় তাঁকে অংশ নিতে দেখা যায়।এ বিষয়ে অবশ্য তাঁর প্রশিক্ষক ছিলেন গোবর গুহ।কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে এবং ওস্তাদ দাবির খানের তত্ত্বাবধানে শুরু হল সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ সে সময়ে আন্তর্কলেজ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় পরপর তিন বছর প্রথম স্থানটি ছিল তাঁর দখলে__ Morning shows the day, আর কি ! বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ করে পারিবারিক ইচ্ছায় ছন্দপতন ঘটিয়ে আইনের পাঠে আগ্রহী না হয়ে কৃষ্ণ চন্দ্রের ছত্রছায়ায় আপনার খেয়াল খুশি মতন পা রাখলেন গানের দুনিয়ায়। https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
কাকার সঙ্গে মুম্বাই গিয়ে তার অধীনে সহকারী সঙ্গীত নির্দেশকের কাজ শুরু করলেন।এরপর শচীনদেব বর্মনের অধীনে ,তৎপরে অন্যান্য বহু নির্দেশকের সঙ্গে ও অবশেষে নিজে স্বাধীন ভাবে সঙ্গীত নির্দেশনার কাজ শুরু করেন। সুরাইয়ার সঙ্গে কৃষ্ণচন্দ্র ও মান্না যৌথভাবে 'ত মান্না' (১৯৪২)ছবিতে গাইলেন ,' জাগো আয়ী ঊষা পঞছী বোলে জাগো '। সঙ্গে সঙ্গে হিট।
সময় ও কাঠামোর রূপান্তরের সঙ্গে তাল রেখে ঐতিহ্যপূর্ণ সুফী সঙ্গীতের ধারার অঙ্গ_কাওয়া লীর উপর দক্ষতা প্রদর্শন করে গাইলেন,' যখন কেউ আমাকে পাগল বলে...'। পাগল হল, ধন্য হল বাংলার সর্বস্তরের আবাল - বৃদ্ধ বণিতা।
বিবিধ হিন্দী সিনেমার সঙ্গীত স্বাধীনভাবে নির্দেশনার সময়ে প্রথম পর্যায়ে তিনি ওস্তাদ আমান আলি খান এবং ওস্তাদ আব্দুল রহমান খানের নিকট হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গের পাঠ নিতে থাকেন।
' রামরাজ্য '(১৯৪৩) চলচ্চিত্রের প্রযোজক বিজয়ভাট এবং সুরকার শঙ্কর রাও ব্যাস নেপথ্য সঙ্গীতের জন্য কাকাকে অনুরোধ করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।কিন্তু ঘরের কোণে উপবিষ্ট ভাইপো সেই সুযোগটি লাভ করলেন।শঙ্কর রাও মান্নাকে গান শেখালেন। ভাইপো কাকার বিশেষ গায়কী অনুকরণ করে গানটি গাইলেন _'গ্যয়ী তো গ্যয়ী সীতা সতী'। এভাবে এককভাবে সঙ্গীতের জগতে তাঁর জয় যাত্রা শুরু হল।
' কাহারবা নয় দাদরা বাজাও/ উল্টোপাল্টা মারছ চাঁটি/শশীকান্ত তুমিই দেখছি আসরটাকে করবে মাটি'__এত সহজ সরল প্রাণবন্ত সুরেলা গল্প-গুজবের আবেদনে সাড়া দিল বাংলা__। আবার ধন্য হল ,পাগল হল মান্নার জন্য যে!
' মশাল '(১৯৫০)'-এ কৃষ্ণচন্দ্রের ছাত্র শচীন দেব বর্মন নির্দেশিত ' উপর গগন বিশাল ' গানটি মান্নাকে প্রথম জনপ্রিয়তা দান করে। এরপর শচীনদেবের সঙ্গে বেশ কয়েকটি। বিখ্যাত গানের শিল্পী হলেন মান্না দে। https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
১৯৫৩ থেকে '৬৯পর্যন্ত তাঁর সাফল্য ছিল শিখর ছোঁয়া।১৯৯০ সালে ছায়াছবির গান বর্জনের। পূর্বে পাঁচ দশক ধরে ৪,০০০- এর উপর সঙ্গীত উপহার দেন।প্রজন্মান্তরের উপযোগী বহু গান তিনি সৃষ্টি করে গিয়েছেন। স্বল্প-পরিসরে তার ব্যাখ্যা সম্ভব নয়।
১৯৫৬ সালে একদল শিল্পীর সঙ্গে গান করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুধা মালহোত্রা,বিনতা চ্যাটার্জী ( সুরেশ তলোয়ারের সুরে ), সবিতা ব্যানার্জী ( এ. আর কুরেশীর সুরে ) এবং মীনা কাপুর ( অনিল বিশ্বাসের সুরে )।
' দেখ কবিরা রোয়া '(১৯৫৭) ছবিতে সুরকার মদনমোহন কৃত রাগের রাণী বাগেশ্রীতে স্থিত 'কৌন আয়া মন ' গানটি মান্নার অনির্বচনীয় কণ্ঠে গীত হয়ে হিন্দী বাণিজ্যিক ছবিতে অন্য মাত্রা দান করল।
১৯৬১ সালের হিন্দী ছবি ' কাবুলিওয়ালা 'তে তাঁর গাওয়া দেশাত্মবোধক গানটি __' এই মেরে প্যারে ওয়াতন এই মেরে বিছারে যমন ' আজও জনগণকে উদ্দীপ্ত করে।
রাজকাপুর এবং নূতন অভিনীত ' দিল হী তো হ্যায় '(১৯৬৩) ছবিতে হৃত্বিক রোশনের দাদু রোশনজীর সুরে রাগ ভৈরবীতে স্থিত ' লাগা চুনারী মে দাগ ' গানটি মান্নার সুরেলা কন্ঠের দৌলতে হিন্দী চলচ্চিত্রের আভিজাত্য বর্ধন করল, চিরকালীন সুপারহিট হয়ে রইল।
১৯৪১__ সে-সময়ে যিনি অভিনয় করতেন ছবিতে তাকেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাইতে হত। সেযুগে অশোককুমার ছিলেন এ হেন নায়ক - গায়ক।বম্বে টকিজের ব্যানারে নির্মিত ' ঝুলা ' ছবিতে একটি গান ছিল ' এক চতুর নর করকে শৃঙ্গার '।সুরকার সরস্বতী দেবী। ' পড়োশন '- এর গীতিকার রাজেন্দ্র সিংকে কিশোরকুমার অনুরোধ করেন তাঁর দাদার গাওয়া ঐ গানটি কে ব্যবহারের জন্য।গীতিকার নায়কের কথা রাখলেন।' পড়োশন ' ছবির শব্দশ্রুতিসুখকর দ্বৈত-সঙ্গীত ' এক চতুর নর করকে শৃঙ্গার '- এ মেহমুদের হয়ে কণ্ঠ দিলেন মান্না আর নায়ক সুনীল দত্তের কণ্ঠে গাইলেন কিশোরকুমার । ১৯৪১ সালের অশোক কুমারের গাওয়া গানের সাথে ১৯৬৮ সালের মান্না দে - কিশোর কুমার জুটির দ্বৈত-সঙ্গীতের সুরের কোনও মিল নেই। করুণ রসাশ্রিত প্রথম গানটি বিস্মৃতির অতলে চলে গেলেও কৌতুক রসাশ্রিত পরের গানটি শ্রোতাদের মনে গেঁথে আছে।গানটিতে মান্না দে কিশোর কুমারের জনপ্রিয়তাকে অতিক্রম করতে না পারলেও এই দ্বৈত-সংগীতটি এতই অপূর্ব ও বিখ্যাত যে ২০১৯ সালে জি - বাংলা আয়োজিত সারেগামাপা অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মূল্যায়নের দিনে প্রতিযোগিনী অঙ্কিতাভট্টাচার্য্য যথাসাধ্য দক্ষতার সঙ্গে এটি গেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপাটি অর্জন করে প্রমাণ করে দিল যে মান্না দে'র জনপ্রিয়তা আজও নবীন প্রজন্মের মধ্যে অম্লান ও অটুটভাবে বিরাজমান।
আর একটি শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন 'প্যার হুয়া ইক রার হুয়া '।এক বর্ষণমুখর রাত্রে একই ছাতার নীচে রাজকাপুর আর নার্গিস!লতাজীর সঙ্গে দ্বৈত-কণ্ঠে গেয়ে মান্না দে এই বিরল দৃশ্যটিকে সুর-ঝঙ্কৃত করে রাখলেন।১৯৭০-এ রাজকাপুর কৃত ফ্লপ ছবি 'মেরা নাম জোকার '- এ 'এ ভাই, জারা দেখকে চলে '_এই iconic গানটি মান্নাদে গাইলেন আর রাজকাপুর 'ক্লাউন'- এর বেশে সেটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুললেন।এই গানটির জন্য শিল্পী সে বছর 'ফিল্ম - ফেয়ার' পুরস্কারটি জয় করেন।
কফি হাউসের আড্ডায় নিখিলেশ,মঈদুল,ডি সুজা,সুজাতা,রমা রায়,অমল আর শিল্পী স্বয়ং সোনালী বিকেলগুলিতে ঝড় - জল উপেক্ষা করেও চারমিনারের উপস্থিতিতে বিষ্ণু দে অথবা যামিনী রায়কে অবলম্বন করে তর্ক- বিতর্ক এবং নানাবিধ আড্ডার সঙ্গে সাতটি পেয়ালাতে কফির তুফান তুলতেন।সেই আড্ডার একজন হতে পেরে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের আমরা আপ্লুত।সেই কফি হাউস,চেয়ার-টেবিল সবই আছে;কিন্তু কালের গতিপথে হারিয়ে গিয়েছে পুরাতন দলটি। সে খানে আসবে ক্রমান্বয়ে নতুন থেকে নবীনতর প্রজন্মের দল। এ আমাদের চিরকালীন ব্যথা আর হাহাকারের গল্প হয়ে থাকবে।তবে তাঁর কণ্ঠ-নিঃসৃত না হলে যুগ- যুগান্তরে হয়তো স্থায়ীভাবে মায়াজাল বুনতো না এই কফি - হাউসের আড্ডার জাদু।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে একদিন অকপটে শিল্পীর স্বীকারোক্তি ছিল, ' আমি জীবনে কোনও দিন কফি - হাউসে যাইনি।' https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
'ইয়ে দোস্তি হাম নেহী তোরেঙ্গে'গানটি 'শোলে' (১৯৭৫) ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্র থেকে শুরু করে সর্বকালীন কলেজ বন্ধু ও অপরাপর সঙ্গী-সাথীর দলের জীবনের বাণী,
যেটি কিশোরকুমারের সঙ্গে দ্বৈত-কণ্ঠে গেয়ে শিল্পী ধন্য করেছেন সঙ্গীত শিল্পকে।
লতা আর মান্নার রত্নখচিত যুগলবন্দী 'ইয়েরাত ভিগী ভিগী 'পর্দায় নার্গিসকে করেছে জ্যোতির্ময়ী। হৃদয় ছুঁয়ে যায় পর্দায় রাজেশ খান্নার নেপথ্যে মান্নার ' জিন্দেগী ক্যায়সী হ্যায় পহেলী 'গানে।
বিভিন্ন সুরকারদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন।তাঁরা হলেন অনিল বিশ্বাস,জাফর খুরশীদ,শঙ্কর রাও ব্যাস,এস কে পাল,এস ডি বর্মন,খেমচাঁদ প্রকাশ; এছাড়া সলিল চৌধুরী ও নতুন যুগের কল্যাণজী - আনন্দজী,লক্ষ্মীকান্ত-প্যারীলাল, রাহুলদেব বর্মন।বহু সঙ্গীত নির্দেশকের সঙ্গে কাজ করেছেন।তাদের মধ্যে অন্যতম নৌশাদ, কে দত্ত,বসন্ত পাওয়ার ও রাম,বসন্ত দেশাই, রবি,এস কে পাল,অবিনাশ ব্যাস,এস এন ত্রিপাঠী,সম্মুখবাবু,নিশার বাজমি,হোসেনলাম ভগৎরাম,বি এন বালী,সুশান্ত ব্যানার্জী, ও পি নায়ার,জি রমানাথন,টি জি লিঙ্গাপ্পা,নির্মল কুমার,গোলাম মুহাম্মদ,বিপিন দত্ত, রবীন ব্যানার্জী, রোশন,স্বপন জগমোহন।এঁদের সঙ্গে ১৯৫৪ থেকে '৬৮ পর্যন্ত বছরগুলিতে কাজ করেন।
১৯৬৯- এ ' আরাধনা ' ছবি থেকে কিশোর কুমারের গান অধিক জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ফলতঃ,মহম্মদ রফি আর মুকেশের সাথে সাথে মান্নার জনপ্রিয়তাও হয় ম্রিয়মাণ।অথচ রাজেশ খান্না তাঁর কিছু গানের জন্য মান্নার কণ্ঠকেই পছন্দ করলেন।ইতিপূর্বে ১৯৬৫ সালে রাহুল দেব বর্মন তাঁকে দিয়ে পশ্চিমী গান গাওয়ার শুরু করেন__' আও ট্যুইস্ট করে 'এবং'প্যার করতা জা ' অন্যতম।লতা,আশা,রফি,কিশোর এমনকি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈত-কণ্ঠে গান করেন। গীতা দত্তের সঙ্গে রক ও পপ ধরনের কিছু গান করেন।
১৯৬১ তে ' রবীন্দ্র সুধা ' নামে যে অ্যালবামটি বেরিয়েছিল তাতে ' বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দ ধারা ' গানটি গান। ২০০২ পর্যন্ত আরও ১৪টি রবীন্দ্রসঙ্গীত হিন্দীতে গান।
বর্মা মালিকের সুরে কয়েকটি হিন্দী সিরিয়াল __'খাড়ি খাড়ি ' (১৯৮৪),' হাম হিন্দুস্তানী ' (১৯৮৬), ' আসমান সে উঁচা '(১৯৯৭) এবং 'আও ঝুমে গ্যয়ে '(২০০১) তে গান করেন।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর সুরে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি গান মান্নাকে দিয়ে গাইয়েছিলেন।গানটি ছিল ' জাগো, নতুন প্রভাত জাগো সময় হল '। গানটি হিট হয়।দুই কিংবদন্তি শিল্পীর এ এক বিরল সৃষ্টি।
হেমন্ত ছাড়াও বাংলায় নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও তিনি গান।'শঙ্খবেলা' ছবিতে লতার সঙ্গে গেয়ে ওঠেন দ্বৈত - কণ্ঠে , 'কে প্রথম কাছে এসেছি '।
সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, প্রথম জীবনে বেশ নায়কোচিত ভঙ্গীতে গান গেয়ে পরে যখন দেখতেন সেটি পাকা চুলের বৃদ্ধের ওষ্ঠ ও কণ্ঠে শোভা পেয়েছে__ দুঃখ পেতেন।উদাহরণ স্বরূপ ' পরিণীতা ' ছবিটি উল্লেখ্য।
শ্রী কৃপালুজী মহারাজের নামে কিছু ধর্মীয় গানের অ্যালবাম তিনি বের করেন।কবিতা কৃষ্ণ মূর্তি এবং সোনু নিগমের সঙ্গেও তিনি কিছু গান করেন। https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
তাঁর গতিপথের সঙ্গীত-সাথী ছিলেন মুকেশ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মহেন্দ্র কাপুর, তালাত মাহমুদ,অমিতকুমার,শৈলেন্দ্র সিং,কৃষ্ণা কাইল শ্রদ্ধা রাজন,লিয়েনগার,আরতি মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়,অনুরাধা পাড়োয়াল,হেম লতা, মীনু পুরুষোত্তম,ভূপিন্দর সিং,কে জে জেশু দাস, পী জয়া চন্দ্রান,সুরেশ ওয়াদেকর, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি ,অলকা ইয়াগনীক,অন্তরা চৌধুরী, প্রীতি সাগর,দিনরাজ কাউর, ইউনুস ফাজমী,যশপাল সিং,আনোয়ার,মনহর উদাস, যোগীন্দর এবং মুবারক বেগম।
' তামান্না '(১৯৪২)' তে কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে হিন্দী চলচ্চিত্র শিল্পে প্রবেশ করে২০০৬- এ সুরকার সমীর ট্যান্ডনের কাজ পর্যন্ত১০২ অপেক্ষা অধিক সঙ্গীত নির্দেশকের সঙ্গে কাজ করেছেন।
ডিসেম্বর ,১৯৫৩ তে কান্নুর,কেরালার কন্যা সুলোচনা কুমারণের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে বাঁধা পড়েন।দুই সন্ততি সুরমা (১৯৫৬) এবং সুমিতা (১৯৫৮)।কিছুদিন যাবৎ মারণ রোগ ক্যান্সার দ্বারা পীড়িত হয়ে জানুয়ারি ২০১২ তে স্ত্রী দেহ রক্ষা করলেন বেঙ্গালুরুতে।সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়,দাম্পত্য - জীবনে তাঁরা ছিলেন রাজজোটক।স্ত্রী দক্ষিণী হয়েও মনেপ্রাণে হয়ে উঠেছিলেন বাঙ্গালী।তাই বাংলার ভাত,ডাল, চচ্চড়ি খুব পরিপাটি রেঁধে খাওয়াতে ও খেতে পছন্দ করতেন।মুম্বাইতে পঞ্চাশোধিক বর্ষ অতিবাহনের পর স্ত্রীর অবর্তমানে মান্না চলে এলেন বেঙ্গালুরুর কল্যাণ নগরে।
মায়াবী কণ্ঠতুলির জাদুকরী ছোঁয়ায় ভাইয়ের পরম আদরভাজন ছোট বোনের ছবি এঁকেছেন 'সে আমার ছোটবোন '- এ।নিয়তির বাম্ পক্ষিক আঘাতে বিয়োগবেদনায় আহত শিল্পী। রচনা করেছেন ভাইয়ের হাহাকারের সুর।
মন যমুনায় ভাব - তরঙ্গের খেলায় বধূর রূপ -গুণের অঞ্জলি আশা করে তার আয়োজনকে ফুটিয়ে তুলতে চাইলেন গানে গানে__ ' বধূ কি তীরে বসে মধুর হেসে..... ও গুণের কি দাম বল,লাজেই যদি আগুন ঢাকে ....।'
কাগজ অথবা পাথরে না লিখে ভালোবাসার নামটি হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত করে নীরবে তাকে রক্ষা করবার আকুতি ফুটিয়ে তুলেছেন কাহারবা তালে নিবদ্ধ করে__'... গভীর হয় গো যেখানে ভালোবাসা/ মুখে তো সেখানে। থাকে না কোনও ভাষা...'। গীতশ্রীর সঙ্গে দ্বৈত- কণ্ঠে গেয়ে উঠেছেন '.... আমারই কাজ হল যে গন্ধে খুশি করা...'।
মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান করবার বিপক্ষে ছিলেন শিল্পী। বছর পঁয়তাল্লিশ পূর্বে সত্তরের দশকে তালতলার উপকন্ঠে জেম সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর এক জলসার আসর। মন মাতানো গানে ডুবে থৈ পেলেন না এন্টালী ও তালতলার মানুষ। বিভিন্ন রাগে গেয়ে চললেন হিন্দী ও বাংলা গান একের পর এক।
মান্না দে তখন মুম্বাইতে আর শ্রদ্ধেয় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায়।পুলক বাবুর শখ হল মান্নাবাবুকে দিয়ে নিজের লেখা দু'চারটি গান গাওয়াবার। সেই মর্মে চিঠিও লিখে ফেললেন তাঁকে।মান্না দে সেই তালিকা থেকে দু'টি গান গেয়েও ছিলেন ' হার মানা হার ' ছবির 'এসেছি আমি এসেছি ' গানটির গীতিকার। পুলক বাবু ও গায়ক মান্না দে।ক্রমে উভয়ের বন্ধুত্ব হল প্রগাঢ়।একদি বিমান থেকে অবতরণের পর মান্না দে - কে পিক আপ করলেন পুলক বাবু শ্যাম বাজারে কিছু জরুরী কাজ থাকায় গাড়ী সেদিকেই এগোচ্ছিল। গাড়িতে বসে কৃষ্ণচন্দ্রের 'ঘুমঘটকে পট খোল ' গানটি গুণগুণ করে গাইছিলেন মান্না।পুলক বাবু গানটি বারবার শুনতে চাইছিলেন শ্যামবাজারে একটি সাধারণ সঙ্গীত শিক্ষালয়ের নিকট পুলক বাবু গাড়ি থামিয়ে মান্নাকে নামিয়ে প্রায় টেনে নিয়ে প্রবেশ করলেন সেই শিক্ষালয়ের ভিতরে। হারমোনি য়ামটি টেনে নিয়ে রচনা করে ফেললেন ' ললিতা গো.....'। বসিয়ে দিলেন মান্নার কন্ঠে এই ছিল পুলক - মান্না জুটি।এর পরের বিখ্যাত গান ' আমি তার ঠিকানা রাখিনি(১৯৬৮)'__ এভাবেই পথ চলা।আরেকটি ঘটনা__ পুজো আসছে; পুজোর গান তৈরি হয়নি।উভয়ে চললেন সিন্ধ্রিতে পালন বাবুর ভায়রাভাই হরি সাধন মুখোপাধ্যায়ের নিকট উপকারলাভের আশায়। ভূলক্রমেঅন্য একটি বাড়ির দরজায় করাঘাত করতে পুলক বাবুর শ্যালিকা না হয়ে অন্য বাড়ির সুন্দরী গৃহবধূ বেরিয়ে এলেন। পুলকিত পুলকবাবু মান্না বাবুর নিকট ফিরে এসে জানালেন, ' গানের ব্যবস্থা হয়ে গেছে....'।সৃষ্টি হল, ' ও কেন এত সুন্দরী হল/ অমনি করে ফিরে তাকাল/... ও কেন তখন খোলা চুলে বাইরে এল...'।
অগ্রগামীর পরিচালনায় ১৯৫৯- এ ' গলি থেকে রাজপথে ' ছবিতেই প্রথম উত্তমের লিপে গান। গেয়েছেন।তবে ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৬-তে। এই ঐতিহাসিক গানটি হল, ' লাগ লাগ লাগ লাগ ভেল্কির খেলা / পারো যত লুটে নাও এই বেলা '। ' শঙ্খ বেলা ' য় গাইলেন, ' আমি আগন্তুক, আমি বার্তা দিলাম/ কঠিন অঙ্ক এক কষতে দিলাম/... ... কলেজ স্কোয়ার '। এ দু'টি গানের পর বাংলা ছবিতে স্থায়ী আসন পাতলেন মান্না দে।
https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
' শঙ্খবেলা ' ছবিতে লতার সঙ্গে গাইলেন,'কে প্রথম কাছে এসেছি/... .. চেয়ে দেখেছি '।'শঙ্খ বেলা' সুপারহিট হল আর মান্না দে পাকাপাকি ঠাঁই পেয়ে গেলেন উত্তম কুমারের লিপে। ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের রাগ- রাগিণী লঘু সুরে রূপান্তরিত হয়ে স্থান পেল মান্নার কণ্ঠে।কথা প্রসঙ্গে গানটির পুনরুল্লেখ হল।
মান্না আর উত্তম উভয়েই তখন বোম্বেতে।উত্তম কুমার মর্নিং ওয়াক করছিলেন। মান্না গাড়ি নিয়ে চলেছিলেন।উত্তম কুমার রাস্তা পারাপারের সময়ে মান্না উত্তমের হাতের মস্ত প্যাকেটটির বিষয়ে জানতে চাইলেন।মান্নার অনুসন্ধিৎসা নিবারণার্থে উত্তম জানালেন যে ওটি একটি টেপ - রেকর্ডার। আরও বিশদ ভাবে জ্ঞাত করলেন যে অ্যান্টনী-ফিরিঙ্গীর গানগুলিতে শিল্পী এমন শক্ত সুরের জাল বুনেছেন যে সেই জট খুলতে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছিল নায়ককে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্যযোগ্য যে উত্তমবাবু গাড়িতে একটি টেপ-রেকর্ডার নিয়েই চলাফেরা করতেন।আর মাঝে মধ্যে গান ভালোবেসে গানের লিপিং অভ্যাসও করতেন।মান্না উত্তমের নিষ্ঠা ভরা অধ্যবসায়ে মুগ্ধ হলেন।প্রাসঙ্গিক গানটি ছিল,'আমি যামিনী,তুমি শশী হে'।
উত্তমের লিপে মান্নার গান,' আমি যে জলসা ঘরে 'প্রাণ ভরিয়ে দেয়।বিমল মিত্রের 'স্ত্রী ' ছবিতে উত্তমের লিপে ঝাঁড়বাতিকে গ্লোরিফাই করে মান্নার ' হাজার টাকার ঝাড়বাতিটা ' আর সৌমিত্রের লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ' রাজা যে টাকাটা.... জঠর জ্বালা ' বিপরীতধর্মী ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টিতে অনবদ্য।কয়েক বছর পর ঐ ঝাড়বাতিকে ডিগ্লোরিফাই করে ' সন্ন্যাসীরাজা' তে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ও নচিকেতা ঘোষের সুরে সৃষ্টি হল,' ভালোবাসার আগুন জ্বালাও/ ঝাড়বাতিটা নিভিয়ে দাও '।সেই কবেকার গান; কিন্তু তাদের বয়ঃবৃদ্ধি ঘটেনি এখনও।
পাশ্চাত্যে দেশী সুর মিশিয়ে নচিকেতার সুরে এককভাবে দুটি ও সন্ধ্যার সঙ্গে আরেকটি গান গাইলেন। ' চিরদিনের ' ছবিতে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় গাইলেন, ' ফুল পাখি বন্ধু আমার ছিল '।
' হোটেল স্নো ফক্স ' ছবিটি ফ্লপ হলেও উত্তমের লিপে তাঁর গাওয়া গান ' বাঁদর থেকে মানুষ হয়েছিল...', ' আমরা ঘুরছি না পৃথিবীটা ঘুরছে '__ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।
পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তার প্রিয় অভিনেতা উত্তমকে দিয়ে বিভূতিভূষণের চার পাতার গল্প ' হিং - এর কচুরী 'অবলম্বনে সৃষ্টি করলেন ' নিশিপদ্ম '।গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার , নচিকেতাকে জানিয়ে দিলেন যে মান্না ছাড়া এ গান লক্ষ্যভেদ করবে না।অনেক প্রশংসা কুড়িয়ে হৈ-হৈ করে ছবি আর গান দুই -ই জনপ্রিয় হল। ' না না না আজ রাতে আর যাত্রা শুনতে যাব না ' আর ' ওগো এবার ম'লে সুতো হব ' এনে দিল সীমাহীন সাফল্য। ।
উত্তমের একটি বেশি বয়সের ছবি ' আনন্দ লোক'-এ অভিনেতা নায়িকার প্রেমে পড়েছেন গৌরীপ্রসন্নের কোথায় মান্না গাইলেন,'আমি উকিল না হয়ে যদি কোকিল হতাম '।মান্না এ গানে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শন। করলেন।
' বিলম্বিত লয় 'ছবিতে আরতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈত - সঙ্গীতে মান্না কলাবতী রাগে সুরারোপ করলেন,' বেঁধোনা ফুলমালা ডোরে / কানুপ্রেম গেঁথে নিও মালা করে,... বেঁধোনা...।'
সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের সঙ্গে ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। তিনিই ' হার মানা হার '(১৯৭২)ছবিতে উত্তমের লিপে মান্নার গান গাইবার ব্যবস্থা করে দেন।উত্তম ছবি আঁকতে আঁকতে গাইছেন আর সুচিত্রা জল নিয়ে প্রবেশ করছেন।গানটি 'তোমার দেহের ভঙ্গিমাটি যেন বাঁকা সাপ'। 'ছদ্মবেশী'-র গান,'আমি কোন পথে যে চলি' । চিরকালের চিরহরিৎ গান।মান্না সুরে সুরে অভিনয় করতেন।পর্দায় সেই অভিনয়ের মূর্চ্ছনা ঘটাতেন উত্তম।'আলো আমার আলো ' ছবির ' এই এত আলো এত আকাশ আগে দেখিনি ' বাঙালির চিরসাথী হতে থাকবে।
গানের পারফেকশান-এর প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ছিল প্রশ্নাতীত।রোশনজী একটু ১২ মিনিটের কাওয়ালী তাঁকে দিয়ে গাইয়েছিলেন।এর জন্য শিল্পী ১২ দিনের রিহার্সালে গানটি। গাইলেন। গানটি ছিল, ' না তো কাহারবা কী তালাশ হ্যায় '।
'বাঙালি যতদিন ভালোবেসে কষ্ট পাবে ততদিন আপনার গান থাকবে।বিরহের গান আপনার গলায়বেশ খোলে।e বিষয়ে আপনার অভিমত কি?' দূরদর্শনের একটি চ্যানেলে এ ধরনের সাক্ষাৎকারে মান্নার বিশুদ্ধ জবাব, ' বিরহের অভিনয় করি '।উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন,' তুমি নিজের মুখেই বললে যেদিন সবই তোমার অভিনয়/ সত্যি কোনও কিছু নয়/ আমি দুঃখ পেলেও খুশি হলাম জেনে।' কিম্বা, নচি কেতা ঘোষের সুরে ' ক' ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালোবাসবে।'ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মোটেই বিরহী ছিলেন না।তাঁর কথায় ,স্ত্রী ছিলেন একই ওয়েভ লেন্থ- এর। বাংলায় কথা বলতেও পারতেন তিনি।
মানব জীবনের পর্যায়ক্রম__ শৈশব - কৈশোর -যৌবন - বার্ধক্য তাঁর সারাজীবনের গানে ধরা আছে।_' মা গো এলাম তোমার কোলে'থেকে 'মাঝরাতে ঘুম ভেংগে যায় ', ' কত কাজ বাকি রয়ে গেল ' অবধি জীবনের অসামান্য এক প্রতিচ্ছবি। https://photos.google.com/photo/AF1QipOVJHfp3ZjvoOJ0NW14zglzeooTxkuSrNf_BapV
সঙ্গীত জীবনে অজস্র মানুষের ভালোবাসা ছাড়াও নানাবিধ পুরস্কার ও উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন মান্না।তার মধ্যে কয়েকটি হল,১৯৭১ এ ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী,২০০৫- এ পদ্মভূষণ,২০০৭- এ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি - লিট উপাধি এবং ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত বঙ্গভুষণ সম্মান উল্লেখযোগ্য।
২০১৩- র ৮ ই জুন বক্ষ - সংক্রমণ ও অন্যান্য শারীরিক অবনতিতে বেঙ্গালুরুর একটি হাস পাতালে আই সি ইউ-তে ভর্তি হলেন মান্না।সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার পর ২০১৩- এর অক্টোবরে পুনরায় ভর্তি হলেন বেঙ্গালুরুর নারায়ণা হৃদয়া লয়াতে।সেখানে ২৪ শে অক্টোবর ৩-৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁর হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে যায় চিরতরে।সঙ্গীতজ্ঞ,রাজনীতিবিদ,ক্রিকেটার ও অপরাপর উল্লেখযোগ্য শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁর বিদায়ে নিজস্ব বিবৃতি দান করেন।বেঙ্গালুরুতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
প্রয়াত এই মহাশিল্পীর সম্মানে২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪- তে উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান স্ট্রীটের নামকরণ করা হয় ' মান্না দে সরণী '। ১২ই এপ্রিল,২০১৭- তে উত্তর কলকাতার রাম সরকার স্ট্রীটের একটি পার্কে মান্না দে'র আবক্ষমূর্তি স্থাপন করা হয় ও পার্কটির নাম রাখা হয় ' মান্না দে উদ্যান '।
২০০৫- এ আনন্দ পাবলিশার্স তাঁর বাংলা আত্মজীবনী ' জীবনের জলসাঘরে ' প্রকাশ করেন।সেটি ইংরেজিতে 'Memories come alive ', হিন্দীতে ' ইয়াদে জি উঠি ' এবং মারাঠীতে ' জীবনসা জলসাঘরত ' নামে অনূদিত হয়।২০০৮- এ তাঁর জীবন নিয়ে 'জীবনের জলসাঘর ' নামে একটি তথ্যচিত্র released হয়।মান্না দে'র উপর একটি। সম্পূর্ণ আর্কাইভ নির্মাণ করছেন ' মান্না দে সঙ্গীত অ্যাকাডেমী'।কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় সঙ্গীতভবনে মান্না দে মিউজিক আর্কাইভ 'টি গড়ে উঠেছে। হরিবংশ রাই বচ্চনের সুরে ' মধুশালা 'য় কণ্ঠদান করে গিয়েছেন এই শিল্পী ডক্টর গৌতম রায় কৃত ' মান্না দে মান্যবরেষু ' শীর্ষক জীবনীগ্রন্থটি প্রকাশ করে ধন্য অঞ্জলি পাব লিশার্স।
এই কিংবদন্তীর যৎসামান্য দর্পণে আবদ্ধ করবার প্রয়াস এক মহাসিন্ধুকে বিন্দুতে স্থাপন করেছে।আগামী শতবর্ষেও মান্না দে'র গরিমা হ্রাস পাবে না,জানি। স্মার্টনেস প্রদর্শনের তাগিদে নতুন প্রজন্ম যেন সাবেকী সঙ্গীতের মূলস্রোত হতে বিচ্যুত না হয়__ প্রতিশ্রুতিই হোক তাঁর জন্মশতবর্ষে সঙ্গীত গুরু,সঙ্গীত সাধক প্রবোধচন্দ্র ওরফে মান্না দে'র প্রতি নিবেদিত দর্পণের বিনম্র শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য।।
🙏🙏
https://photos.google.com/photo/AF1QipNUXkMnTOIgbk-8WBy40eyMG-xznww0W767oxMl
https://youtu.be/aiEgU4Uj2Hc?si=OEDFy-2UYfo2aY2N
মাতৃশক্তির বন্দনায় তাঁর গানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিতা ' চলতি পথে প্রিয়া '।🪔🪔🪔🪔
🙏
✍️চলতি পথে প্রিয়ার ২০১৯ - এর ডায়েরী হতে প্রাপ্ত এই 'শতবর্ষে মান্না - স্কোপ ' সৃষ্টির অনুপ্রেরণা তালতলা দর্পণ ও তার উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র ১) ডা:শঙ্কর নাথ মহাশয় ( সম্পাদক ) ও ২) স্বর্গীয় শ্রী সন্তোষ কুমার মোদক মহাশয়( সহ সম্পাদক )।বন্ধুদের সুযোগ্য সংযোজনায় সমৃদ্ধ হোক আগামীর পথ।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
🙏
✍️ স্বল্প-সংখ্যক বন্ধু দ্বারা পঠিত হলেও প্রার্থিত সংযোজন ও শুভেচ্ছা লাভের প্রতীক্ষায় ' চলতি পথে প্রিয়া '।🙏
উত্তরমুছুন